সম্প্রতি ওমানের রাজধানী মাসকাটে অনুষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ক পরোক্ষ আলোচনা। দুই পক্ষই এই বৈঠককে ‘ইতিবাচক’ ও ‘গঠনমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করলেও, একই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উঠছে নানা প্রশ্ন।
১২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এই আলোচনা ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রথম পরোক্ষ বৈঠক। দীর্ঘ বিরতির পর দুই দেশের আলোচনায় বসাকে কূটনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি নিশ্চিত করেছেন, আলোচনার দ্বিতীয় ধাপ রোমে অনুষ্ঠিত হবে।
সামরিক শক্তি বাড়ানোর নেপথ্য কারণ
আলোচনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক তৎপরতা কি কোনো বার্তা দিচ্ছে? মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগনের ব্যাখ্যায়, পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। এ কারণেই প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।
যদিও বিস্তারিত সংখ্যা বা ঘাঁটির নাম প্রকাশ করা হয়নি, মার্কিন বিমান বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বি-২ স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান পাঠানো হচ্ছে অঞ্চলটিতে। ধারণা করা হচ্ছে, ইরাক, কাতার, জর্ডান ও কুয়েতেই মোতায়েন করা হতে পারে এই বিমানগুলো।
পুরোনো কৌশলের পুনরাবৃত্তি?
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার পুরোনো দ্বিমুখী কৌশলই পুনরায় প্রয়োগ করছে—আলোচনার মাধ্যমে শান্তির বার্তা, আর সমান্তরালে সামরিক চাপের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করা। লিবিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তানে এই কৌশল আগেও দেখা গেছে।
তবে এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। কারণ, এবার ইরান আলোচনায় বসেছে রাশিয়া ও চীনের কূটনৈতিক সমর্থন নিয়ে, যা তেহরানের অবস্থানকে আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী করেছে।
মস্কোর সঙ্গে কূটনৈতিক সংলাপ
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আরাঘচি চলতি সপ্তাহের শেষদিকে মস্কো সফরে যাচ্ছেন। মাসকাট আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে মতবিনিময় করাই এই সফরের মূল উদ্দেশ্য। রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং পরমাণু আলোচনার একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
আভ্যন্তরীণ সমালোচনা ও অতীতের ভয়
তবে ইরানের অভ্যন্তরে আলোচনা ঘিরে বিভাজন স্পষ্ট। কট্টরপন্থিদের মতে, সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের 'চাল' বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। অনেকে সাবেক লিবীয় নেতা গাদ্দাফির পরিণতির উদাহরণ টেনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার বিরোধিতা করছেন। গাদ্দাফি গণবিধ্বংসী অস্ত্র পরিত্যাগের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে গিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইরান ইস্যুতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চান তিনি। আলোচনায় ব্যর্থ হলে সামরিক অভিযান চালানোর হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
শেষ কথা
পরিস্থিতি যতটা জটিল, কৌশল ততটাই স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র চায় আলোচনার মাধ্যমে ইরানকে নিয়ন্ত্রণে আনতে, কিন্তু পেছনে রয়েছে সামরিক চাপের হিসাব। অন্যদিকে, ইরান অতীত অভিজ্ঞতা ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের ভিত্তিতে কৌশলগত জবাব দিতে প্রস্তুত।
মধ্যপ্রাচ্যে এই সামরিক উত্তেজনার মাঝে শান্তির সম্ভাবনা কতটা বাস্তব, তা নির্ধারণ করবে সময়।
সূত্র: রয়টার্স, আনাদোলু
0 মন্তব্যসমূহ